শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৬ অপরাহ্ন
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলায় চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আলোচিত চেয়ারম্যান ‘বালুখেকো’ খ্যাত সেলিম খানকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহ পর তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিন আদালতে সেলিম খানের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির। দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান।
গত ১৪ আগস্ট ৩৪ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মামলায় তিন সপ্তাহের মধ্যে সেলিম খানকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী জানান, তিন সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ না করতে পারায় সেলিম খান পুনরায় আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন।
সেলিম খানের পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির জাগো নিউজকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশে মামলা নম্বর ভুল ছিল। এই কারণে আমরা আবার নতুন করে জামিন আবেদন বরেছি। আগামীকাল এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে।
এর আগে গত ১ আগস্ট সেলিম খানের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ এই মামলা করে দুদক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সেলিম খান অবৈধ উপায়ে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জন করে নিজ ভোগদখলে রেখেছেন। এছাড়া তিনি ৬৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।
দুদক সচিব জানান, অনুসন্ধান কর্মকর্তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশন সভায় সেলিম খানের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত হয়।
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সেলিম খানের ইউনিয়নের মেঘনা পাড়ে একটি এলাকা নির্ধারণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যান সেলিম খান, তার ছেলেমেয়েসহ অন্য জমির মালিকরা অস্বাভাবিক মূল্যে দলিল তৈরি করেছেন। ফলে ওই জমি অধিগ্রহণে সরকারের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫৩ কোটি টাকা।
জমির অস্বাভাবিক মূল্য নিয়ে জেলা প্রশাসকের তদন্তে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করার পরিকল্পনা ধরা পড়ে। পরে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বিষয়গুলো উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক, যা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এর আগে চাঁদপুর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পর্কে অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য উপস্থাপন করায় চেয়ারম্যান সেলিম খানকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে কয়েক বছর ধরে চাঁদপুরের নদী অঞ্চল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে ওই চেয়ারম্যানসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে।
এমনকি অনুমতি ছাড়াই তিনি বছরের পর বছর বালু বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সবশেষ ৬ এপ্রিল সেলিম খানের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ যাচাইয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুমিল্লার সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সা’দাতের নেতৃত্বে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুদক টিম।